গৌরব দাশ নয়ন,যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন থেকে: যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আধুনিক ও ব্যস্ত শহর বোস্টন। বোস্টনের ব্যবসায়িক ও পর্যটন প্রাণকেন্দ্রে আকাশছোঁয়া বিল্ডিং, লেটেস্ট গাড়ির জট আর রঙ-বেরঙের আলোর ঝলকানির সঙ্গে প্রতি শুক্র শনিবার বসে কাঁচাবাজার।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, বোস্টন শহরতলির ব্ল্যাকস্টোন স্ট্রিট আর ক্লিন্টন স্ট্রিট ঘেষে সপ্তাহের এ দুইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাজা ফলমূল, সবজি আর মাছের বাজার বসে খোলা আকাশের নিচে। প্রায় দুইশ বছর ধরে চলে আসা এ বাজার অনন্য ঐতিহাসিক নিদর্শন হওয়ার পাশাপাশি সুলভ মূল্যে তাজা সবজি পাওয়ার জন্য স্থানীয়দের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
হে মার্কেট নামক এ বাজারে মানুষের হইচই, দরদাম আর বিক্রাতাদের হাঁকডাক আমাদের প্রবাসীদের মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশের মফস্বলের চিরচেনা কাঁচাবাজারের কথা। বোস্টনের ডাউন টাউন অন্যসব মার্কিন শহরের ডাউন টাউনের মতোই। স্কাইস্ক্র্যাপার, বড় বড় কোম্পানির অফিস। তবে এ ডাউন টাউনের আছে এক ব্যতিক্রমী নিদর্শন যা মার্কিন মুলুকে তো বটেই, বাংলাদেশের ঢাকাতেও দেখা যায় না। বলছি হে মার্কেটের কথা যেখানে স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার কৃষকরা নিজেদের ফলানো ফল ও সবজি নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য।
লোগান ইন্টারন্যাশনাল অ্যায়ারপোর্টের হাইওয়ে ধরে টিডি গার্ডেন পেরিয়ে ডাউন টাউন। প্রাণকেন্দ্র বলতে যা বোঝায় সেই ডাউন টাউনে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে বোস্টনের অন্যতম দুই আকর্ষণীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য- ওল্ড স্টেট হাউস আর ফেনাউইল হল মারকেটপ্লেস। ফ্রিডমট্রেইলের শেষ মাথায় অবস্থিত এ দুইয়ের থেকেও আমাকে বেশি টানলো ঘরমুখি মানুষের ভিড় ও হইচই।
প্রথমে ভেবেছিলাম এ ভিড় ব্ল্যাকস্টোন স্ট্রিটের বিখ্যাত সব পানশালা অভিমুখি, কিন্তু সন্দেহ হওয়াতে এগিয়ে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চোখ ছানাবড়া! এ যে পুরো গ্রামবাংলার হাট! সারি সারি শাকসবজি আর ফলমূলের দোকান। অস্থায়ী এ দোকানগুলো থেকে বিক্রেতাদের ডাক শোনা যাচ্ছে…‘স্ট্রবেরি বক্স…টু ডলার…টু ডলার’, দরদামও করতে দেখা যাচ্ছে অনেককে, যা মার্কিন মুলুকের বাকি সব জায়গায় ‘বিগ নো নো’।
হে মার্কেটে সদাইপাতির দামও অনেক কম, অনেক ক্ষেত্রে সুপারমার্কেট বা গ্রোসারি স্টোরের তিন বা চার ভাগের এক ভাগ। হে মার্কেট কম মূল্যে তাজা সবজির যোগান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমানের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা ‘বর্ধিষ্ণু স্থূলতা’ বা ‘ইনক্রিজিং অবেসিটি’ কমাতে সহায়ক প্রমাণিত হলেও এটি নতুন কিছু নয়। আজ থেকে প্রায় দুই শতক আগে ১৮৩০ সালে প্রথম সুসংগঠিত হে মার্কেট বসে। তখন থেকে বোস্টন গ্রাম থেকে নগর, নগর থেকে মহানগর হয়েছে, চার্লস নদীতে বয়ে গেছে অনেক জল। কিন্তু ক্রিসমাস ডে, নিউ ইয়ার ডে আর অতিরিক্ত তুষারপাত ছাড়া কখনো খোলা আকাশের নিচে এ হে মার্কেট বন্ধ হয়নি!
হে মার্কেটে যতই ঘুরছি ততই বাংলাদেশের চিরচেনা হাটবাজারের কথা মনে উঁকি দিচ্ছে। ইংরেজ দোকানিদের মুখে যেনো ফুটে উঠছে পরিচিত কোনো সবজি বা মাছ বিক্রেতার অবয়ব। হঠাৎ মনে হলো, এ শীতে গরম চা আর পেঁয়াজু হলে বিষয়টা একদম একশতে একশ মিলে যেতো। কিন্তু আফসোস, এটা বাস্তব জীবন সিনেমা নয়। চা টেনেটুনে মিলে গেলেও কোনো ইংরেজ এখানে পেঁয়াজু ভাজবে এ আশা করলে আশা ভঙ্গই হবে।
সূত্র, বিডিনিউজ২৪.কম